ত্বকের যত্ন নিয়ে কিছু কথা !!

Writer : Dr. Tania Hafiz

আমরা সকলেই ফর্সা ত্বকের জন্য আগ্রহী। কিন্তুু একবার কি চিন্তা করি যে আমার ত্বক ফর্সা কিন্তুু ব্রণ, কালোছোপ, ডার্কসার্কেল, রিংকেল, খসখসেভাব এগুলো রয়েছে ত্বকে তাহলে সেইটা ভালোলাগবে দেখতে?? সৃষ্টিকর্তা যাকে যেভাবে সৃষ্টি করেছেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিৎ। ত্বকের রং যেমনই হোক না কেন ত্বককে হতে হবে দাগমুক্ত, কোমল, নমনীয়, প্রানবন্ত আর তারজন্য প্রতিদিন ত্বকের যত্ন নিতে হবে।

নিজের, পরিবারের, আত্মীয়স্বজনের, প্রতিবেশীর এবং রোগীদের ত্বকের যত্ন কিভাবে নিবেন আসুন জানি সেই বিষয়ে বিস্তারিত –

💁।। পর্যাপ্ত পানি পানঃ

প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা, দিনে অন্তত ২-৩লিটার পানি পান। ত্বক পানিশূন্য বা Dehydrate হলে শুস্ক, খসখসে, মলিন,নিস্তেজ দেখায়। পানি ত্বককে Hydrate করে। Toxin কে Remove করে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে।

💁।। খাদ্যাভাসঃ

একদিকে খাবার যেমন আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখতে সাহায্য করে ঠিক তেমনই এই খাবারই আবার ত্বকের ক্ষতি করে থাকে। জ্বি হ্যা, অতিরিক্ত তৈলাক্ত-মশলাজাতীয় খাবার, প্রতিনিয়ত ফার্স্টফুড, বাসি খাবার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। খেতে হবে টাটকা শাকসবজি, ফলমুল। ভিটামিন সি, ই সমৃদ্ধ খাবার আমাদের ত্বকের জন্য উপকারী, কারন এতে রয়েছে এন্টি-অক্সিডেন্ট যা ফ্রি-রেডিক্যালকে দুর করে। যারফলে ত্বকের মলিনতা দুর হয়ে, উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।

💁।। সঠিক নিদ্রাভাসঃ

পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের সকলের জন্য কতটা গুরুত্বপুর্ন তা আমরা সকলেই জানি। একজন পুর্নবয়স্ক মানুষের অন্তত ৬-৭ঘন্টা ঘুমানো উচিত। আর যদি এটা ঠিকমত না হয় বা অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকা হয় তাহলে ধীরেধীরে চোখের নিচে Dark Circle পরে, ত্বক মলিন-নিস্তেজ হয়ে যায়, Pigmentation হয়, ক্লান্তভাব ফুটে ওঠে চেহারায়। আর তাই সঠিক নিয়মে ঘুম (মানে ঘুমের আগে ত্বকের সামান্য যত্ন যা নিচে আলোচনা করবো) এবং পর্যাপ্ত পরিমাণের ঘুম আমাদের সকলের জন্য প্রয়োজন।

Benefit Of Sleep.


💁।। Exercise/ব্যায়ামঃ

ব্যায়াম ➡ আমাদের শরীরের রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয় ➡ কোষসমুহ পুস্টি পায় ➡ রেজুভেনেশন হয় ➡ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। তাই প্রতিদিন একটা নির্দিস্ট সময়ে কিছুক্ষন ব্যায়াম করা যেমন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো তেমনই আমাদের ত্বকের জন্য উপকারী।

💁।। No Smoking :

ধুমপান কোনোদিক থেকেই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এটা আমরা সবাই জানি ধুমপানের ক্ষতিকর দিকসমূহ সম্পর্কে। এই ধুমপান আমাদের ত্বকের জন্যও ক্ষতিকর

ধুমপান

কোলাজেন টিস্যুকে ভেঙে দেয়

ত্বকের Elasticity কমে যায়

রিংকেলস, Dark Circle, মলিন ত্বকের সৃষ্টি হয়।

তাই ধুমপান বর্জন করতে হবে।

💁।। জানতে হবে ত্বকের ধরনঃ

আমাদের সবাইকে জানতে হবে যে আমাদের ত্বকের ধরন কি? মানে Dry, Oily, Mixed, Normal, Sensitive এই ৫ধরনের মধ্যে কোনটা। আর এর উপর নির্ভর করে আমাদের ত্বকের যত্ন ও স্কিন প্রোডাক্ট নির্বাচন করতে হবে। যেকোনো একটা Product কিনে এনেই ত্বকে লাগানো ঠিক নয় এতে ত্বকে এলার্জী/ICD হতে পারে, ত্বক শুস্ক/রুক্ষ হয়ে যেতে পারে, ব্রন হতে পারে। তাই ত্বকের ধরন অনুযায়ী যত্ন নিতে হবে, ব্যবহার করতে হবে সেই অনুযায়ী স্কিন প্রোডাক্ট।

💁।। Cleansing :

অন্তত ২বার– সকালে গোসলের আগে এবং রাতে ঘুমানোর আগে ক্লিনজার/ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিস্কার করতে হবে। (এই বিষয়ে আমার একটা পোস্ট আছে বিস্তারিত)। আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী ক্লিনজার নির্বাচন করতে হবে।

💁।। Moisturizer :

ফেসওয়াশ করার পরে ত্বক হালকা ভিজা থাকা অবস্থাতেই moisturizer ব্যবহার করবেন। এতে শোষন ক্ষমতা ভালো হয়, আদ্রতা বজায় থাকে। অনেকেই মনে করেন যে ত্বকে moisturizer লাগালে pores বন্ধ হয়ে যাবে, pimple হবে, আবার অনেকে মনে করেন তৈলাক্ত ত্বকে moisturizer লাগালে ত্বক আরো তেলতেলে হয়ে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এটা সম্পুর্ন ভুল ধারনা। শুস্ক/তৈলাক্ত/মিশ্র সব ত্বকের জন্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার জরুরি। কারন ময়েশ্চারাইজার ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে ➡ ত্বককে রুক্ষ-শুস্ক হতে বাধা দেয় ➡ যার ফলে iritation হয়না, মলিন হয় না➡ উজ্জ্বলতা বজায় থাকে। তাই ত্বকের ধরন অনুযায়ী moisturizer নির্বাচন করতে হবে।

💁।। Scrubbing, Exfoliating :

সপ্তাহে একবার Scrubbing ই যথেষ্ট ত্বকের জন্য। আমরা মনে করি যে বারবার Scrubbing বা Exfoliating করলে ত্বকের মরাকোষ উঠে যাবে, ত্বক প্রানবন্ত হবে। এটা ভুল ধারনা, হ্যা Scrubbing এ মরা কোষ দুর হয় কিন্তুু বারবার এটা করলে ত্বকের উপরে যে protective লেয়ার থাকে তা উঠে যায়➡খসখসে হয়ে যায়➡Pigmentation দেখা দেয়।
বারবার ঘর্ষনে Sebaceous Gland Active হয়➡ অতিরিক্ত তেল নিঃসৃত হয়➡Pimple, ব্রন দেখা দেয়➡ত্বক খারাপ হয়ে যায়।
(Scrubbing নিয়ে একটা পোস্ট আছে)

💁।। Sunscreen:

প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যাবহার ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেইটা যে ধরনের ত্বকই হোক না কেন। (এই বিষয়ে আমার আগে একটা পোস্ট আছে বিস্তারিত)। এখানেও সেই একই কথা ত্বকের ধরন অনুযায়ী সানস্ক্রিন নির্বাচন করতে হবে। সানস্ক্রিন ত্বককে রোদে পোড়াভাব, পিগমেন্টেশন, কালো ছোপছাপ, মেলাসমা, এজিং, রিংকেল এগুলো থেকে রক্ষা করে।

💁।। Retinol সমৃদ্ধ Product :

Retinol Anti Aging হিসাবেও কাজ করে।
Aging প্রসেসকে কমিয়ে দেয়
Collagen তৈরি করে
স্কিনের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। তবে অবশ্যই ডার্মাটোলজিস্টের সাথে Consult করে প্রোডাক্ট নির্বাচন করবেন।

💁।। ব্রন, Pimple :

ত্বকে ব্রণ থাকলে কখনওই নখ/ আঙুল লাগাবেন না। এতে ব্রণ আরো ইনফেকটেড হয়ে যায় এবং দাগ বসে যায়। তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ বেশি হয়ে থাকে। তাই যত্ন নিন তৈলাক্ত ত্বকের (বিস্তারিত আগের পোস্ট)।

💁।। অজানা দ্রব্য ব্যবহার মানাঃঃ

আমরা অনেকেই মনে করি যে ওমুক বা তমুক এই প্রোডাক্ট লাগিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করেছেন তাহলে আমিও এটা লাগাই। এমনটা করবেন না প্লিজ। নিজের ত্বকের ধরন অনুযায়ী প্রোডাক্ট বেছে নিতে হবে।
আবার অনেকে ভাবি অনেক দামি বা দাম দিয়ে স্কিনের প্রসাধনি কিনলে তা ত্বককের জন্য ভালো এটাও ভুল ধারনা। আপনার ত্বকে যেইটা মানানসই সেইটাই ব্যাবহার করবেন।

💁।। মেকআপ রিমুভঃঃ

সর্বশেষ যত্ন হলো মেকআপ রিমুভ। সারাদিনের ক্লান্তিতে অনেকেই বাসায় এসে ঘুমিয়ে পরি অথবা কোনো রকমে মুখটা ধুই। এটা ত্বকের জন্য চরম ক্ষতিকর। জ্বি হ্যা, মুখের মেক-আপ ভালোভাবে রিমুভের সাথে সাথে চোখের ও ঠোটের মেকআপও রিমুভ করতে হবে। চোখের কাজল, আইলাইনার, মাশকারা, শ্যাডো এগুলো ভালোভাবে না তুললে এগুলোর কণা চোখের মধ্যে যেয়ে চুলকানি ও লালভাব করে, ডার্কসার্কেল তৈরী হয়। লিপস্টিক নিয়ে ঘুমিয়ে পরলে ঠোঁট শুস্ক হয়ে যায়। তাই মেকআপ যথাযথো নিয়মে রিমুভ করবেন। চোখে ও ঠোঁটে ভ্যাসলিন/বাদাম তেল লাগিয়ে ঘুমাতে পারেন আর মুখে লাগাবেন ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার।

Edited By : Nahid Hassan.