মানুষ মারা যাচ্ছে সেটা যতটা ভাইরাসের জন্য, তার চেয়ে বেশি হল শরীরের নিজের জন্য!

Writer : ডা. কাওসার
ঢামেক, K-65.

মুখের বুলি আর বন্ধুকের গুলি, একবার বের হলে থামানো কঠিন!

এই যে SARS CoV-2 আক্রমণের ফলে COVID-19 হচ্ছে, অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে সেটা যতটা ভাইরাসের জন্য, তার চেয়ে বেশি হল শরীরের নিজের জন্য!

আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত কত ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে। সেসব সন্ত্রাসী মারার জন্য শরীরের immunological পুলিশ বাহিনী কত কিছুই করে। কিন্তু SARS CoV-2 এর বিরুদ্ধে শরীর একটু বেশি বেশি করে ফেলছে!

বেশি বেশি কেন করছে?

ধরুন, কোন বাড়িতে প্রায়শই বিভিন্ন জায়গা থেকে চোর আসে চুরি করতে। বাড়ির মালিক আগে থেকেই এটা জানে, চোর ধরতে সে অভ্যস্ত। তাই যে চোরই আসুক না কেন, খুব সামান্য কৌশল খাটিয়েই সে চোর ধরে ফেলে।

কিন্তু বাড়ির মালিক জানে না, চোর কেমন কোন প্রকৃতির, কারণ আগে কখনো তার বাড়িতে এমন চোর চুরি করেনি। তবে তিনি জানেন এই চোর চুরি করতে আসতে পারে, তাই চোর ধরা যাতে মিস না হয়, কোন মতেই যেন পালাতে না পারে তাই তিনি সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, দেখামাত্রই গুলি!

এবার মিলিয়ে দেখুন!

যারা রোগীর চিকিৎসার সাথে জড়িত, পেশাগত কারণে তাদের প্রায়শই ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া নামক বিভিন্ন শক্তি সম্পন্ন চোরদের মোকাবিলা করতে হয়। তাই তারা মোটামুটি অভ্যস্ত, সহজ উপায়ে কিভাবে চোর অর্থাৎ ভাইরাস মারতে হয়!

তাই চোর আসলে তাকে মারতে চিকিৎসকদের শরীর যে পরিমাণ cytokine release করবে তা অন্যদের তুলনায় কম। তাই তাদের complications ও কম!

কিন্তু এখানে একটা ঝামেলা আছে। চোর যদি সংখ্যায় বেশি থাকে তবে, চিকিৎসকদের শরীরের এই পূর্ব অভিজ্ঞতা ততটা কাজে লাগে না। বেশি সংখ্যায় একসাথে অনেক চোর, প্রতিদিনই চোর আসছে এমনটা ঘটলে চিকিসকদের শরীরও সাধারণ মানুষের মত response করতে পারে, দড়ি দিয়ে চোর না বেঁধে সরাসরি গুলি করে মারার চেষ্টা চালাতে পারে!

আর সরাসরি গুলি করে চোর মারার সময় যে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে সেটা হল, গুলি চোরের গায়ে না লেগে নিজের গায়েই লাগতে পারে। ঘটনা খারাপ হয় ঠিক তখনই!

গুলি লাগলেও অত ভয়ের কিছু নাই যদি তাড়াতাড়ি অপারেশন করে সেটা বের করা যায়, অর্থাৎ Supportive Managemant ঠিকঠাক দেয়া যায়। কিন্তু গুলি যদি লাগে মাথায় বা বুকে, অর্থাৎ Co-morbidity থাকে তখন ব্যাপারটা একটু Risky হয়ে যায়, খুব তাড়াতাড়ি সতর্কতার সাথে অপারেশন করতে হয়, অর্থাৎ Supportive থেরাপি আরো দ্রুত দিতে হয় – Monitor করতে হয় আরো Carefully। সবকিছু করার পরেও ঝামেলা হতে পারে এসব ক্ষেত্রে।

সাধারণ মানুষের শরীর চোর বা বিভিন্ন ভাইরাস দেখে অতটা অভ্যস্ত না। তাই চোর আসতে পারে এই ভয়ে তাদের প্রস্তুতি থাকে বেশি, দেখা মাত্রই শুরু থেকেই তারা গুলি করা শুরু করে, থামাথামি নাই, থামে তখনই যখন গুলি শেষ হয়! অর্থাৎ cytokine release একবার তাদের শুরু হলে, সেটা এটম বোমার chain reaction এর মত বাড়তেই থাকে, চোর ভাইরাস মরে সব ভুত হলেও অন্ধের মত গুলি ছুড়তেই থাকে! তবুও ওই যে বললাম এই সময়টাতে Supportive therapy ঠিকমত দিতে পারলে, আর co-morbidity কম থাকলে চিন্তা কম।

এইসব হাবিজাবি লেখার মূলকথা হল, এ ভাইরাস বিশ্বব্যাপি দাপিয়ে বেড়ালেও সে সামান্য একটা চোর মাত্র! তাকে সামলাতেই হিমশিম খেয়ে সাধারণ মানুষের শরীর excess response দেখাচ্ছে, আর আমরা জানি excess of anything is bad! আর very bad হল তাদের জন্য যারা আগে থেকেই বদ অভ্যাস আর রোগ ব্যাধি দিয়ে শরীরের বারোটা বাজিয়ে বসে আছে!

সেই তুলনায় আশার দিক হলো, অনেক চিকিৎসকদের শরীর আগে থেকেই এদের ব্যাপারে প্রস্তুত, তাই তাদের immunological response কম বা নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু সমস্যা হল, একসাথে অনেক চোর বা অল্প সময়ের ব্যবধানে বারবার চোরের আগমন। তখন চিকিৎসকরাও ঝুঁকির মধ্যে থাকে!

তাই COVID-19 spread কম হওয়াটা বেশ জরুরী। রোগী কম হলে, বা confirmed case exposure interval বেশি থাকলে চিকিৎসকরা নিরাপদ থাকবে। কিন্তু একসাথে অনেক রোগী, বা অল্প সময়ের ব্যবধানে অনেক রোগী আসলে তাতে চিন্তা কিছুটা বাড়বে। আর disease spread কমাতে proper quarantine মেইনটেইন করার কোন বিকল্প নাই।

Aerosol generating procedure এ proper PPE অত্যাবশ্যক, Confirmed case গুলোর চিকিৎসাতেও proper PPE অত্যাবশ্যক। আর বাকি ক্ষেত্রে ঠিকমত Triage maintain হলে PPE যা আছে সেটাই proper hand sanitizer সহ ব্যবহার ও সতর্কতা অবলম্বন করলে আমাদের দুঃচিন্তা কম।

রোগীদের সেবা দিতে হবে। AKI রোগী pulmonary oedema হয়ে respiratory distress নিয়ে আসলো, আপনি শুধু শ্বাসকষ্ট দেখেই চিন্তা করলেন, ‘করোনা! বাইরে গিয়ে মরোনা!’ এমন করাটা শুধু ভুল না, শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আপনি কোন aerosol generate করছেন না, সিম্পল একটা OT গাউন আর গ্লাভস পরে রোগী দেখেন, দেখা শেষ হলে হ্যান্ড রাব বা ওয়াশ করে নেন, স্টেথোটা hexisol দিয়ে disinfect করে নেন, তাহলেই তো আপনি সেভ, বাঁচে ওই রোগীটাও…

Edited By : Nahid Hassan.