মা বললো বাবু সারাক্ষণ কান্না করে, কি করবেন !

Writer : মুফতি ডাঃ ইসমাইল আজহারি,

ফাহিমা আক্তার ২৫ বছর বয়সে সদ্য প্রথম সন্তানের মা হয়েছে, শিশুর বয়স ২ মাস, ওজন ৫ কেজি, ফাহিমা তাকে শিশু ডাক্তারের কাছে নিয়ে এসেছে.

ডাক্তার – কি হয়েছে মা? বাবুর কি সমস্যা.

ফাহিমা- স্যার, আমার বাবু সারাক্ষণ কান্না করে?

ডাক্তার – সারাক্ষণ মানে কতক্ষণ কান্না করে? কান্না কখন বেশি করে?

ফাহিমা- স্যার, বিকাল বেলা ও সন্ধ্যা বেলার দিকে কান্না শুরু হয়, এক -দুই ঘন্টাতেও কান্না বন্ধ করেনা, কোলে নিলেও কান্না করে,

ডাক্তার – প্রতিদিন কি একই নির্দিষ্ট টাইমে কান্না করে?

ফাহিমা- জ্বি স্যার, অনেক ডাক্তার দেখাইছি, কোনো কাজ হচ্ছেনা, কেন এমন কান্না করে?

ডাক্তার – সে ঠিকমতো দুধ পান করে?
ফাহিমা- জ্বি স্যার, সে দুধ পান করে, খাওয়া দাওয়ায় তার কোন সমস্যা নাই,

ডাক্তার – বাবু প্রস্রাব করে কয়বার?

ফাহিমা- স্যার অনেক বার প্রস্রাব করে, প্রস্রাবে, পায়খানায় কোনো সমস্যা নাই,
সমস্যা হচ্ছে কেবল কান্না করে?

ডাক্তার হিসাবে এখন আপনার Diagnosis কি হবে !

জ্বি,৷ এই সমস্যাকে Infantile Colic বলে, আসুন বিস্তারিত জেনে নিই-

Infantile Colic কি?
৬ সপ্তাহ থেকে ৬ মাস বয়সী শিশুদের প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটা সময় ৩ ঘন্টা করে সপ্তাহ ৩ দিনের অধিক কান্নাকাটি করাকে Infantile Colic
বলে.

কান্নার পরিমান সাধারণত সন্ধ্যাবেলায় বেড়ে যায়, রাতেও কান্নাকাটি করে, এমন বেশি কান্নাকাটি করে যে, বাবা মা চিন্তায় পড়ে যায়, শিশুর না জানি কি হয়েছে!

অনেক বাবা মা এই কান্নাকাটি বন্ধ করার জন্য এক ডাক্তারের পর আরেক ডাক্তার পরিবর্তন করে থাকে. আবার কিছু মা আছে, শিশু বাচ্চাকে মেরে কান্না বন্ধ করাতে চেষ্টা করে।

লক্ষণ সমূহ :

  • ১। সাধারণত ৬ সপ্তাহ থেকে ৬ মাসের শিশুদের এই সমস্যা দেখা যায়,
    তবে দুই সপ্তাহের এবং ছয় মাসের বেশি বয়েসী শিশুদেরও হতে পারে।
  • ২। প্রতিদিন তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে পরপর তিনদিন কিংবা সপ্তাহে তিনদিন করে তিন সপ্তাহ একটি নির্দিষ্ট সময়ে কান্নাকাটি করা, সাধারণত সন্ধ্যা থেকে রাতের মধ্যে
  • ৩। কান্নার সময় শিশু সাধারণত অস্থিরতা ভাব প্রকাশ করে, কান্না করতে করতে মুখমণ্ডল লাল করে ফেলে, নাক দিয়ে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে যায়, এছাড়াও হাঁটু ভাঁজ করে পেটের দিকে রাখে, কপালে ভাঁজ এবং হাত শক্ত করে মুঠি করা থাকে

কারণ

১-পেট ব্যাথা বুঝাতে সাধারণত কোলিক শব্দ ব্যবহার হয়ে থাকে,
সাধারণত ২০-২৫% শিশু জন্মের দেড় মাস পর Infantile Colic কে আক্রান্ত হয়৷ তবে তার মধ্যে ৯৫% শিশুর কোলিক জনিত অতিরিক্ত কান্নার কারণ নির্ণয় করা যায়না, কেবল ৫% ক্ষেত্রে কারণ জানা যায়।

তাই ডাক্তারদের ধারণা, অন্ত্রের মধ্যে অস্বাভাবিক সংকোচন এর ফলে পেট ব্যাথা করে, এবং বাচ্চা কান্নাকাটি শুরু করে।

এইক্ষেত্রে Abnromal GIT spasm কে কারণ হিসাবে বিবেচনায় রাখা হয়, যদিও তা কোনো পরিক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে established করা যায়না.

২- বাচ্চার মায়ের যদি এলার্জি থাকে, আর মা যদি এলার্জিক খাবার খায়, যথা গরুর গোস্ত, গরুর দুধ ইত্যাদি, তখন মায়ের দুধপানের মাধ্যমে বাচ্চার মধ্যেও এলার্জিক প্রতিক্রিয়া হয়ে বাচ্চার Infantile Colic হতে পারে,

৩- বাচ্চাকে গরুর দুধ কিংবা পটের দুধ (কৃত্রিম দুধ) পান করানোর কারণেও ইনফ্যান্টাইল কোলিক হতে পারে।

-কোষ্ঠকাঠিন্যতা

– বদহজমি

– সঠিক Position নে বাচ্চাকে দুধ পান করানো না হলে দুধপানের সময় বাচ্চার পেটে বায়ু প্রবেশ করে পেটে গ্যাস তৈরি করে Infantile Colic হতে পারে।

-দুধপান করানোর পর ব্যায়াম করানো না হলেও এমন সমস্যা হতে পারে…

– যেইসব বাচ্চার অন্ত্রে নরমাল Gut flora পরিমান কম থাকে, তাদের ও Infantile Colic হতে পারে।

– পেটের সমস্যা যথা gastritis জনিত সমস্যা

১১। শিশুকে ঠিকমতো কোলে না নেয়া থেকে স্ট্রেস।

১৩। শিশুর পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া।

১৪। Active কোনো ইনফেকশন থাকা, যথা Urine Infection, Otitis media, Fever, ইত্যাদি

প্রতিকার ও চিকিৎসা –

বিভিন্ন গবেষণায় Infantile Colic জনিত বাচ্চার অতিরিক্ত কান্নাকাটি করাকে একটা শিশুদের একটা সাধারণ শারিরীক বিষয় হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে, তাই এই ক্ষেত্রে পিতামাতা কে Counseling করাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় চিকিৎসা

বাবা মা কে বলে দিবে, এইটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনো দরকার নাই, দেড় মাস বয়স থেকে ৬ মাস বয়সের মধ্যে ২০-২৫% শিশুর এমন সমস্যা হয়, যখন কান্নাকাটি করবে, একটু কোলে নিয়ে ঘোরাঘুরি করবেন, শিশুর বাবাকে বুঝাবেন, যেনো মা কে সাপোর্ট দেয় এই ক্ষেত্রে, যেনো শিশু কে কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়

যদি কোনো কারণ জানা থাকে, যথা কোষ্ঠকাঠিন্য আছে কিনা, বাহিরের খাবার খায় কিনা? মায়ের এলার্জি আছে কিনা, সঠিক নিয়নে দুধ পান করায় কিনা? যদি এইসব কোনো জায়গায় সমস্যা থাকে, তাহলে তা পরিহার করে চলবে।

আর Active কোনো Infection থাকলে তার চিকিৎসা করবে।

ঔষধ
ঔষধে এই ক্ষেত্রে তেমন একটা উপকার পাওয়া যায়না, তারপরেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে Anti colic মেডিসিন যথা Dicycloverine ব্যবহার করা হয়। এতে Abnormal spasm এর পরিমান কিছুটা কমে, ডোজ হচ্ছে-
5 mg/kg
বাজারে সিরাপ Cyclopan নামে পাওয়া যায়, ১ চামচে ১০০ mg থাকে।
তবে ৬ মাসের আগে Anti spasmodic মেডিসিন ব্যবহার না করাই উত্তম।

আবার কিছুকিছু ক্ষেত্রে Anti-dyspeptic মেডিসিন যথা Simethicon ব্যবহার হয়ে থাকে

Infantile Colic র মধ্যে যদিও Simethicon ব্যবহারের কোনো Indication পাওয়া যায়না, তথাপি প্র‍্যাক্টিস এর ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, এইটা খাবার পরে অনেক বাচ্চার কান্নাকাটি কমে যায়।

Simethicon ড্রপ আকারে পাওয়া যায়-
Drop – Flacol/ Pedigas/ etc

Dose – 2 বছরের নিছে 20 mg করে দিনে ৪ বার দেওয়া যেতে পারে। ম্যাক্সিমাম ২৪০ mg daily। ১ ml ড্রপে থাকে ৬৭ mg

তাই ২ মাসের বাচ্চাদের কে ৬-৮ ফোটা করে দেওয়া যেতে পারে দৈনিক ৪ বার।

আবার কিছু কিছু বাচ্চার অন্ত্রে উপকারী অণুজীব তথা Normal Gut flora কম থাকার কারণে তাদের Infantile Colic হয়, তাদের ক্ষেত্রে Probiotic supplementary অনেক ভালো কাজ করে।

যাদের Breast Milk এলার্জি অথবা অন্য কোনো ফুড এলার্জি মনে হবে, তাদের জন্য Anti histamin উপকারী

তবে সর্বশেষ কথা হচ্ছে, এইসব রোগীদের মূল চিকিৎসা হচ্ছে Parent Counseling।

Infantile Colic নিয়ে Scenario based কয়েকটি আর্টিকেল দেওয়া হবে, মনে রাখবেন, আপনার কাছে শিশু রোগীদের বিশাল একটা অংশ আসবে Infantile Colic নিয়ে, আপনি বুঝতে না পারলে বাচ্চার কান্নাকাটির ইতিহাস শুনে ডাক্তার হিসাবে নিজেকেই কান্না করতে হবে।

Be a good doctor for your family

Edited By : Nahid Hassan.