সাপ হাত-পা বিহীন দীর্ঘ শরীরের, মাংসাশী, ধূর্ত এক প্রকার সরীসৃপ। সাপের কামড়, একটি প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা কিন্তু এটি ব্যাপকভাবে অবহেলিত সমস্যা, বিশ্বব্যাপী মৃত্যু এবং অক্ষমতা সহ লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে চলেছে ৷
প্রতি বছর, প্রায় 138,000 মানুষ মারা যায়, আরও 400,000 অক্ষমতা, বিকৃতকরণ এবং অঙ্গ কেটে ফেলার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সাপে কামড় বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
সাপে কাটা ব্যক্তিকে প্রথমে আশ্বস্ত করতে হবে যে তার ভয়ের কোনো কারণ নেই। এর বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা আছে। বেশির ভাগ সাপই নির্বিষ, এমনকি বিষধর সাপের পক্ষেও দংশনের সময় সব সময় প্রচুর পরিমাণ বিষ ঢেলে দেওয়া সম্ভব হয় না। এ জন্য আক্রান্ত ব্যক্তিকে সাহস দেওয়া প্রয়োজন।
প্রাথমিক চিকিৎসার পর হাসপাতালে দ্রুত নিতে হবে। হাসপাতালে স্থানান্তরের সময় আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাঁটতে না দিয়ে কাঁধে, খাটিয়ায় বা কোনো যানবাহনের সাহায্যে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সম্ভব হলে সাপটি দেখতে কেমন, তা লক্ষ করা। সাপের বর্ণনা চিকিৎসককে চিকিৎসা পরিকল্পনায় সাহায্য করতে পারে। দংশিত স্থান কিছুতেই কাটাছেঁড়া করা উচিত নয়। কেবল ভেজা কাপড় দিয়ে কিংবা জীবাণুনাশক মলম দিয়ে ক্ষতস্থান মুছে দিতে হবে। আক্রান্ত স্থান থেকে মুখের সাহায্যে রক্ত বা বিষ টেনে বের করার চেষ্টা করা বা ক্ষতস্থানে গোবর, শিমের বিচি, আলকাতরা, লালা, ভেষজ ওষুধ বা কোনো প্রকার রাসায়নিক লাগানো উচিত নয়। দংশন করা স্থান থেকে ওপরের দিকে একটি লম্বা কাঠ এবং গামছা বা কাপড় দিয়ে কেবল একটি বাঁধন এমনভাবে দিতে হবে, যেন তা খুব আঁটসাঁট বা ঢিলে কোনোটাই না হয় । কারণ, খুব বেশি শক্ত করে বাঁধলে আক্রান্ত অঙ্গে রক্ত চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যেহেতু মাংসপেশির সংকোচনে বিষ দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, তাই সাপে কাটার স্থান বেশি নড়াচড়া করা উচিত নয়। আক্রান্ত ব্যক্তিকে বমি করানোর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ কিংবা কানের ভেতর বা চোখের ভেতর কিছু ঢেলে দেওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে।
সাপে কামড় দিলে কি কি করণীয় নয় : আতংকিত হওয়া যাবে না
ওঝা বা ঝাড়ফুঁকের অপেক্ষা করবেন না
চিকিৎসক দেখার আগ পর্যন্ত কিছু খাওয়া উচিত না
কোন মলম বা মালিশ লাগানো উচিত না
সাপে কাটা জায়গায় শক্ত করে বাঁধা, কারণ রক্ত জমে গিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তি পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন।
সঠিক বা পরিপূর্ণ জ্ঞানের অভাবে অনেক সময় সাপের কামড়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে অনেকেই, মৃতের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৯১৯ জন সাপের কামড়ের শিকার হয়, তন্মধ্যে মারা যায় ৬ হাজার ৪১ জন। আশঙ্কার বিষয় হলো, এর মধ্যে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় মাত্র ৩ শতাংশ মানুষ। একটু সচেতন হলেই কিন্তু খুব সহজেই এই বিপদ এড়িয়ে জীবন বাঁচানো সম্ভব। তাই আসুন সচেতন হই, বাঁচাই লাখো প্রান।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.