Writer : ডা. কাওসার
ঢামেক, কে-৬৫
কুল বংশের রাজা বকুল ঢাকায় আসিলো বেড়াইতে! তারপর গাবতলী থেকে মুড়ির টিনে চড়িয়া গেলো গুলিস্তান! খুঁজিয়া পাইলো পাবলিক টয়লেট, মুত্র বিসর্জন করিয়া তবেই শান্তি!
বাসে ওঠার আগে গরমে অতিষ্ঠ হইয়া বকুল কয়েক বোতল পানীয় পান করিয়াছিলো। এরই ফলস্বরূপ তার মুত্রথলি পূর্ণ হইয়া বেশ পীড়াদায়ক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়!
যার কারণ হইলো, Cold Drinks ও শরবত পানীয় Diuresis করে। এরা রক্তের osmolarity কমিয়ে ADH এর secretion কমিয়ে দেয়, ফলে water reabsorption কম হয়, আর বেশি বেশি মূত্র এসে জমা হয় মূত্রথলিতে। ওদিকে তাহার যে ডায়াবেটিস আছে তাতো আপনারা আগেই জেনেছেন, যে কারণে তার আবার frequency of micturation ও হয়। সবকিছু মিলিয়ে বেচারাকে বেশ কষ্ট করে জ্যামে আটকা থাকিয়া নিম্নচাপ নিয়ন্ত্রণ করিতে হইয়াছিলো। তবুও বেচারা হাল ছাড়েনি। পাবলিক টয়লেট পাইয়া তবেই সে নীরবে নিভৃতে মূত্র বিসর্জন করিয়াছে। সকল প্রকার চাপ পরাজিত হইয়াছে তার সক্রিয় মস্তিষ্কের Cerebral Cortex এর কাছে…
গল্পটা আর দীর্ঘায়ত করছি না। শেষ লাইনের সূত্র ধরে এবার আসল কথায় আসি। Urinary Bladder (UB) এ দুই ধরণের nerve supply আছে – ১। Autonomic ২। Somatic
Autonomic হলো Sympathetic ও Parasympathetic.
আমরা জানি Sympathetic হলো Thoraco Lumber outflow – আর তাই UB এর Sympathetic Supply আসে T10 – L2 থেকে।
আর Parasympathetic হলো Cranio Sacral outflow – আর তাই UB এর Parasympathetic Supply আসে S2 – S4 থেকে।
এবার আসি Somatic Nerve Supply সেটাও দুই ধরণের, Sensory ও Motor.
Sensory Nerve Bladder থেকে ব্রেইনে যায়।
Motor Nerve brain থেকে ব্লাডারে আসে।
Sympathetic শরীরের জরুরি অবস্থা।
Parasympathetic শরীরের আরামের অবস্থা।
আরামের অবস্থায় থাকলেই মানুষ বেশি বেশি খায়, আর আর ঘন ঘন প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে যায়! অর্থাৎ আরামের অবস্থা parasympathetic যা মুত্রথলি খালি করতে সাহায্য করে,আর ঠিক উল্টোভাবে sympathetic মূত্রথলি পূর্ণ করতে সাহায্য করে।
মূত্রথলির দেয়ালের একটা অংশ Detrusor নামক প্রসারণক্ষম muscle দিয়ে তৈরি, আর তার নিচের দিকে internal sphincter নামে একটা ছিদ্র আছে।
মূত্রথলিকে পূর্ণ করতে হলে sphincter কে সংকুচিত, আর detrusor muscle কে প্রসারিত হতে হবে। উপরের হিসাব মতে এ কাজটা করে sympathetic.
মূত্রথলিকে খালি করতে হলে sphincter কে প্রসারিত, আর detrusor muscls কে সংকুচিত হতে হবে। উপরের হিসাব মতে এ কাজটা করে parasympathetic.
মুত্রথলির মধ্যে মূত্র জমা হচ্ছে, Detrusor muscle প্রসারিত হয়ে মূত্রথলিও বড় হচ্ছে। এর ফলে চাপ বাড়ছে internal urethral sphincter এর উপর। প্রসারিত হতে হতে Detrusor muscle এর পিঠ একসময় দেয়ালে ঠেকে যায়, অতিষ্ঠ হয়ে যায় sphicter ও। তাদের পক্ষে আরো লোড নেওয়া অসম্ভব, তাই তারা sympathetic কে বলে, ‘ব্যাটা থাম এবার! আর parasympathetic কে অনুরোধ করে Active হয়ে মুত্রথলি খালি করার!
Parasympathetic যখন Detrsusor muscle কে সংকুচিত আর Internal sphincter কে প্রসারিত করে মূত্র বিসর্জন করতে যাবে, ঠিক তখনই বকুলের cerebral cortex parasympathetic কে একটা ঝাড়ি দিয়ে বলে , “ব্যাটা করছিস কি! তুই কি বাস ভর্তি মানুষের সামনে প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলবি! আর একটু ধৈর্য্য ধর! বাস থেকে নেমে টয়লেটে গিয়ে মূত্রত্যাগ করিস! দেখছিস না somatic sensory nerve ও আমাকে বারবার সিগনাল দিচ্ছে external urethral sphincter খুলে দেওয়ার জন্য, কিন্তু আমি খুলতে পারছি না, লজ্জা শরমের একটা ব্যাপার আছে না!”
বকুলের cerebral cortex এর লজ্জা শরম অবশেষে জিতে যায়, অর্থাৎ এখানে somatic motor control Paper hand নেয় parasympathetic ও sensory nerve এর উপর। আর একারণেই শত চাপচাপি সত্ত্বেও বকুল বাসের মধ্যে প্যান্ট না ভিজিয়ে পাবলিক টয়লেটে এসেই মূত্রত্যাগ করে।
এখন কথা হলো এই somatic motor fibre UB এ পৌছায় কিভাবে? motor fibre গুলো ব্রেইন থেকে স্পাইনাল কর্ডে আসে, আর সেখান থেকে বের হওয়ার দুটো পথ আছে, ১। Sympathetic ২। Parasympathetic। এখন যদি প্রশ্ন করি কোনটা দিয়ে বের হবে? উত্তর খুব সহজ! মুখস্থ না করেই বলতে পারি, somatic motor ব্লাডার খালি করে, আবার parasympathetic ও খালি করে, তাই motor fibre গুলো parasympathetic এর S2 – S4 segment থেকে বের হয়ে bladder এর external urerhral sphincter এ যাবে। এই S2-S4 থেকে motor nerve গুলো যে ব্রিজ দিয়ে bladder এ আসে তার নাম pudendal nerve.
ব্লাডারের উপর কন্ট্রোল নিয়ে Autonomic আর Somatic এর মধ্যে যেন কোন ঝামেলা না বাঁধে সে বিষয়টি দেখভাল করে pontine micturation centre.
ঢাকা শহরের অতিরিক্ত গরমে প্রেশার বাড়িয়া বকুল হঠাৎ স্ট্রোক করে। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন! না সে মরে নায়, Paralized হয়ে শয্যাশয়ী। পায়খানা প্রসাব সব সে এখন বিছানাতেই করে, কখন যে করে তাও সে বলতে পারে না।
অর্থাৎ এখানে বকুলের cerebral cortex এর voluntary motor control নষ্ট হয়ে গেছে। তাই সে এখন জানতেই পারে না, কখন blader পূর্ণ হচ্ছে, আর কখন খালি করতে হবে। এই সুযোগে Autonomic নিজের ইচ্ছেমত অল্পস্বল্প চাপে পড়লেই যখন খুশি তখন মূত্র বিসর্জন করে যাচ্ছে, ডেভেলপ করছে urinary incontinence।
তবে nerve এর সমস্যার কারণেই যে শুধু urinary incontinence হয় তা কিন্তু না। মূত্রথলি যে pelvic floor এর উপর বসে আছে, সেই floor কোন কারণে দূর্বল হয়ে গেলে মূত্রথলির প্রেশার মূত্রনালী অপেক্ষা বেড়ে যায়। এতটাই বেড়ে যায় যে, voluntary motor control ফেইল করে মূত্র যায় বের আসে। প্রেশার বা stress বাড়ার কারণে এই ঘটনা ঘটে বলে একে stress incontinence বলে। এখানে pelvic floor দূর্বল হওয়ার প্রধান কারণ হল বাচ্চার Normal ডেলিভারির সময় বাচ্চা নিয়ে টানাহেচড়া, বিশেষ করে obstructed labour এর সময়। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে Prostate এর সার্জারি করতে গিয়েও pelvic floor দূর্বল হয়ে stress incontinence Develop করতে পারে।
Strees incontinence এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এটা হয় সামান্য সময়ের জন্য সামান্য পরিমাণে। মূত্র কিছুটা বের হয়ে ব্লাডার প্রেশার কমে গেলেই incontinence বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার হয়। অর্থাৎ পরিমাণে অল্প কিন্তু বারবার হয়, যদি না আশেপাশে টয়লেট থাকে!
অন্যদিকে যখন UTI হয় বা ব্লাডার মধ্যে কোন stone থাকে বা ব্লাডার ওয়ালের অন্য কোন প্যাথলজির কারণে ব্লাডারের detrusor muscle মূত্রের প্রতি hypersensitive হয়ে যায়, ফলে অল্প মূত্র জমা হলেও বেশি জমা হয়েছে এমন ভাব নিয়ে ব্লাডারকে সংকুচিত করে মূত্রকে বাইর বের করে দেয়। এটাকে বলে urge incontinence.
যখন Bladder ও ভ্যাজাইনার মধ্যে কোন Direct সংযোগ তৈরি হয় যাকে fistula বলে, তখন Bladder থেকে কিছু মূত্র নিয়ন্ত্রণহীনভাবে vagina দিয়ে সবসময় বের হতে থাকে! সবসময়ই অল্প অল্প মূত্র lick করে বলে একে continual incontinence বলে।
এই fistula সাধারণত মেয়েদের হয়, যার কারণ হল মেয়েদের জরায়ুর কোন অপারেশন। তাছাড়া জরায়ুর কোন ক্যান্সার বা ক্যান্সারের কারণে দেওয়া Radiotherapy কারণেও fistula হতে পারে। এছাড়া prolonged obstructed labour এর কারণেও fistula তৈরি হতে পারে।
মূত্রথলির নেক যেখানে internal urerhral sphincter থাকে, সেটি যদি চিকন হয়ে যায় কোন কারণে, অথবা পুরুষদের ক্ষেত্রে এর চারপাশে থাকা prostate gland বড় হয়ে যদি নেকটাকে চিকন করে দেয়, তখন সব নার্ভ স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও মূত্রথলি ঠিকভাবে মূত্র বিসর্জন করতে পারে না। এতে মূত্র জমা হয়ে মূত্রথলি ফুলতে থাকে, এবং এক সময় এত বেশি ফোলে যে মূত্রের চাপে কিছু মূত্র নিজে নিজেই বাইরে বের হয়ে আসে যাকে বলে overflow incontinence. উপরের ঘটনার আর একটি খারাপ দিক হলো, মূত্র মূত্রথলির capacity বাইরে জমা হলে কিছুটা ureter দিয়ে উপরে কিডনির দিকে উঠে যায়, যার ফলে সেখানে হয় hydronephrosis, infection হয়ে pyelonephritis, এমনকি AKI.
বকুল ওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার না হয়ে, নিচ দিয়ে পার হচ্ছিল। আর ঠিক তখনি পিছন থেকে ৪ নাম্নার বাসে এসে দিলো ধাক্কা! ধাক্কা খেয়ে বকুলের কোমড়ের intervertebral disc গেল সরে, আর সরেই cauda equina তে nerve এর উপর দিল চাপ, damage হয়ে গেল pelvic plexus. ফলাফল bladder এর উপর autonomic control loss – তৈরি হয় Atonic Bladder. ফলে detrusor muscle আর প্রসারিত হয় না, আর sphicter ও ঠিকমত কাজ করে না। মূত্রথলিতে মুত্র জমা হয়ে একটু চাপ তৈরি হলেই নিজে নিজেই মূত্র বের হয়ে যায়, এটাও overflow incontinence.
যাদের মূত্রনালির internal ও external sphincter এর মধ্যে থাকা bulbar urethra তে কোন u-bending বা diverticula বা structure থাকে, তাদের
মূত্র ত্যাগের সময় কিছু মূত্র সেখানে জমা হয় এবং মূত্র ত্যাগ শেষে সেখান থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় বাইরে বের করতে হয়। বের করে external urethral sphincter এ আসা voluntary motor control. একে বলে post micturation dribbling.
সর্বশেষ সংবাদ অনুযায়ী কুল বংশের রাজা বকুল ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আছে। খুব শিঘ্রই সে সুস্থ হয়ে তার রাজ্যে ফিরে যেতে পারবে বলে আশা করা যায়।
ধন্যবাদ সবাইকে।
Edited By : Nahid Hassan.
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.