Writer : ডা. কাওসার
ঢামেক, কে-৬৫অনেক দিন পড়াশুনা হয় না, ডা. মাখনলাল ডিউটির চাপ সামলাতেই বেশি ব্যস্ত। ক্লান্ত শ্রান্ত মাখনলালের হঠাৎ একদিন ইচ্ছে হয় চাকরী ছেড়ে ছুড়ে দূরে কোথাও চলে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ, গাড়িতে চড়ে বসলো। গাড়ি ছুটছে তো ছুটছেই। হঠাৎ সে বুঝতে পারলো গাড়ির স্পিড নিজে নিজেই বাড়ছে ! যে কোন মুহূর্তে এক্সিডেন্ট হতে পারে। তাই সে দ্রুত ব্রেক কষলো। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না, ব্রেকটাও ফেইল! গাড়িতে থাকা ইমার্জেন্সি টুল বক্স থেকে স্ক্রু ড্রাইভার বের করে গুতাগুতি করে ব্রেক ঠিক করার চেষ্টা করলো, কিন্তু কোন কাজ হলনা! এক্সিডেন্ট এবার হবেই!
ব্রেক ফেইল অবস্থায় গাড়ি ছুটতে তো ছুটছেই। একটু পর সামনে এক বাজার পড়লো, সেখানে রাস্তায় অনেক লোক। কিন্তু কোন উপায় নেই, গাড়ি রাস্তায় থাকা বেশ কিছু লোককে চাপা দিয়ে মেরে ফেললো! এভাবে মানুষ মারতে মারতে দিশা হারিয়ে গাড়িটা শেষমেষ ধাক্কা খেল সামনে থাকা এক নাড়িকেল গাছের গায়ে। আর যায় কই, গাড়ি ধুমড়ে মুছড়ে উলটে গেল, আর মাখনলালও অক্কা পেল সেখানে…
এতক্ষণ কি সব হাবিজাবি পড়লাম ! আসলে এতক্ষণ – ক্যান্সার কি, কেন হয়, কিভাবে ছড়ায় এ সবই পড়ে শেষ করলাম! কিন্তু কিভাবে, সে ব্যাখা নিচে ।
আমরা জানি আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত cell division হচ্ছে। একটা cell থেকে তৈরি হচ্ছে অসংখ্য cell। শরীর নিজের প্রয়োজনে এই division করে এবং এই division হওয়াটা নিয়ন্ত্রিত। কেমন নিয়ন্ত্রিত?
- প্রথমত– cell division একটি নির্দিষ্ট হারে হবে। মাখনলালের গাড়ির মত অটো এক্সিলারেশন হয়ে মাত্রাতিরিক্ত হবে না।
- দ্বিতীয়ত– cell division নের প্রয়োজনীয়তা ফুরালেই সেটি stop হয়ে যাবে। মাখনলালের গাড়ির মত ব্রেক ফেইল করে চলতেই থাকবে না।
- তৃতীয়ত– cell division নের সময় কোন abnormal cell তৈরি হলে repair জিন এসে সেটাকে ঠিক করবে, ঠিক না করতে পারলে মেরে ফেলবে। মাখনলালের গাড়ির মত যতই স্ক্রু গুতানো হোক কিন্তু ব্রেক ঠিক হবে না এমনটা ঘটবে না।
উপরের তিনটি ঘটনাই হল স্বাভাবিক। কিন্তু স্বাভাবিক ঘটনাগুলো না ঘটে যখন মাখনলালের গাড়ির মত উল্টাপাল্টা ঘটবে, ঠিক তখনই হবে ক্যান্সার! অর্থাৎ অনিয়ন্ত্রিত cell division হবে, abnormal cell তৈরি হবে, সেই abnormal cell গুলোকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করতে পারবে না, আর সেগুলো ছুটে ছুটে মাখনলালের ব্রেক ফেল করা গাড়ির মত ভাল cell গুলোকে মেরে ফেলবে অর্থাৎ metastasis হবে!
আচ্ছা এতসব উল্টা পাল্টা ঘটনা ঘটার কারণ কি, অর্থাৎ ক্যান্সার কেন হয়?
কারণ, মাখনলালের উপর অযাচিত প্রেশার ছিল। সেই প্রেশারে পিষ্ট হয়ে সে ছিল বড্ড ক্লান্ত শ্রান্ত। ঠিকভাবে কাজ করার মত মানসিক ও শারীরিক অবস্থা তার ছিল না। অর্থাৎ বিভিন্ন মেকানিক্যাল কেমিক্যাল carcinogen ও virus দ্বারা আক্রান্ত হয়ে cell division নের normal regulatory জিনগুলো abnormal হয়ে গিয়েছিল। যার ফলেই ঘটে যত সব বিপত্তি, হয় ক্যান্সার!
আচ্ছা যে সব cell র কোন division হয়না, যেমন permanent cell, তাদের কি ক্যান্সার হতে পারে?
তার আগে বলে নিই, আমাদের শরীরে মোটামুটি তিন রকমের cell আছে।
এক শ্রেণী যাদেরকে বলে labile cell. অর্থাৎ সংখ্যা বৃদ্ধি করার ক্ষমতা আছে এদের। ক্যান্সার এদেরই বেশি হয়, যেমন blood cell, প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে আর ভেঙে যাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত stable cell, অর্থাৎ এরা stable বা স্থির। কিন্তু সেটা সব সময়ের জন্য না, শরীর প্রয়োজনে তাদের division করতে পারে, যেমন fibroblast cell. কোথাও কেটে গেলে এদের division হয়ে scar formation হয়। যেহেতু এদের division হওয়ার ক্ষমতা আছে তাই ক্যান্সার এদেরও হয়।
তৃতীয়ত permanent cell, যেমন neuron, cardiac muscle. division নাই, তাই এদের ক্যান্সারও নাই। তবে neuron এর সাথে থাকা neuroglia তে কিন্তু division হয়, ব্রেইনের ক্যান্সারগুলো ওই neuroglia তেই হয়।
আচ্ছা মাখনলালের গাড়িটা যদি কাদায় আটকে যেত, তবে কি হত ভাবুনতো! গাড়ি জায়গায় বসে চলার চেষ্টা করতো, আর আশেপাশে কাদা ছিটাতো (benign tumor), কিন্তু রাস্তায় উঠে নিরীহ মানুষ চাপা দিতো না (malignant tumor/ ক্যান্সার)!
Blood cell এর যে malignant tumor গুলো হয় সেগুলো হল Lymphoma, Leukaemia.
Lymphoma ও Leukaemia এর মধ্যে তফাৎ যে খুব বেশি তা কিন্তু না। মাখনলালের গাড়ি যদি কাদায় পড়ে কাদা ছিটাতে ছিটাতে একটা সময় রাস্তায় উঠতে সক্ষম হয়ে যায়, তবে সেটা হল Lymphoma। আর কাদায় আটকে না যেয়ে শুরু থেকেই যদি রাস্তায় নেমে মানুষ মারতে থাকে সেটা হল Leukaemia.
অর্থাৎ Blood cell এর Abnormal division হচ্ছে bone marrow তে, আর তৈরি হওয়া মাত্রই circulation এ ছড়িয়ে পড়ছে, এটাই হল Leukaemia.
আর যদি bone marrow তে blood cell এর abnormal division হচ্ছে, কিন্তু abnormal cell গুলো ভিতরেই থাকছে যতক্ষণ পর্যন্ত না ভিতরের স্টোর হাউজ পূর্ণ হচ্ছে। যখনই bone martow হাউজফুল, ঠিক তখনই এবনর্মাল blood cell গুলো circulation এ ছড়িয়ে পড়ছে, এটাই হল Lymphoma.
( leukaemia Part -1) চলবে…
Edited By : Nahid Hassan.
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.