Writer : ডা. কাওসার
ঢামেক, কে-৬৫
ছবির গ্যালারি স্ক্রল করে করে পুরাতন ছবিগুলো দেখছিলাম। হঠাৎ এই ছবি দুটোতে চোখ আটকে গেল। ২ মাস আগে তোলা।
ওকে প্রথম দেখে একটু কনফিউজড ই ছিলাম, ছেলে না মেয়ে ! মেয়ে মনে হচ্ছিলো! কিন্তু এটা তো Male ওয়ার্ড! আবার মনে হল ও ই কি পেশেন্ট, না তার পাশে যে বয়োজেষ্ঠ্য মানুষটি বসে আসেন তিনি? না রোগী ও ই ছিল, মাদ্রাসায় পড়ুয়া এক ছাত্র। পাশে ওকে ধরে রাখা ওর বাবা। উনি গ্রামের বাজারে ক্ষুদ্র কোন ব্যবসা করেন, দরিদ্র সংসার।
প্রথম দেখায় ওকে Cushing, Hypothyroidism এসব মনে হচ্ছিলো,
আবার শুধু মুখ দেখে কেন জানি একবার Nephrotic syndrome ও মনে হলো, হাতে পায়ে ফোলা না থাকায় সে চিন্তা থেকে তখনই সরে এলাম।
মাথার ডান পাশে কাঁটা দাগ দেখা যায়। জিজ্ঞেস করে জানা গেল এটা অপারেশন এর দাগ, Craniotomy করা হয়েছে কয়েক বছর আগে। মাথায় টিউমার হয়েছিল।
ও চোখে দেখে না, দু চোখের একটিতেও না। আগে কিন্তু ঠিকই দেখত। স্বাভাবিক ভাল মানুষের মতই দেখতো। ওর কথাগুলো ও বেশ সাবলীল ভাবেই সব নিজেই বলছিলো। সেসব বেশ ক বছর আগের কথা। কিন্তু ওর বর্ণনা শুনে স্মৃতিশক্তি বেশ ক্ষুরধার মনে হল। মাদ্রাসায় ভাল ছাত্র ছিল।
ও বেশ কিছুদিন ধরে মাথা ব্যথায় ভুগছে। প্রথমে অল্প ছিল, তাই তেমন একটা আমলে নেয়নি। চোখেও একটু কম দেখে। ডান চোখে। একদিন মাদ্রাসায় যাওয়ার সময় মাথায় প্রচন্ড ব্যথা, সাথে বমি, অনেকটা অজ্ঞান হওয়ার মত অবস্থা। সেই অবস্থায় গ্রাম থেকে শহরে।
শহুরে ডাক্তার মাথার সিটি স্ক্যান করে দেখেন Tumor! এটাই বড় হচ্ছে আর Brain এ প্রেশার দিচ্ছে, অপারেশন করতে হবে,
ওর পরিবার বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। তারা স্মরণাপন্ন হন নিউরোসার্জনের কাছে। সব দেখে শুনে সার্জন এই অপারেশনের ভাল খারাপ সব কিছু খুলে বলেন। খারাপ একদম কম না, অপারেশন পরবর্তীতে হয়তো মাথা ব্যথা ভাল হবে, কিন্তু দৃষ্টি এই অবস্থা থেকে ভাল হতেও পারে, বা আরো বেশি খারাপও হতে পারে। সার্জন প্রথমে অপারেশন করতে রাজি হন না। ওদের ভাষ্যমতে, ওদেরই অনুনয় বিনয়ে অবশেষে তিনি রাজি হন। অপারেশনের চার্জও অনেক কম রাখেন সেই সার্জন।
অপারেশন শেষে ওর দৃষ্টি কিন্তু ফিরে আসে না, বরং দুটো চোখেই ও দৃষ্টি হারায়। এটাই হয়তো অনিবার্য ছিল। ওরাও ছিল মানসিকভাবে প্রস্তুত।
ওর মাথা ব্যথাটা আর থাকে না। কিন্তু দু চোখেই অন্ধ হওয়া ছাড়াও কিছু নতুন সমস্যা ওর তৈরি হয়!
ওর Tumor টা ছিল
Craniopharyngioma. এটা একটা benign tumor. Brain এ tumor এমনিতেই কম, কারণ neuron গুলো non dividing cell, আর tumor মানে হল abnormal unwanted multiplication, তাই neuron এ tumor না হলেও, neuron এর আশেপাশে যে supporting structure গুলো যারা dividing সেগুলোতে বিভিন্ন tumor হয়।
Craniopharyngioma উৎপত্তি Rathke’s pouch থেকে। এটা হল সেই জিনিস যেটা development এর সময় mouth ও pharynx এর উপরের দিকে থাকে, এটা থেকে এ tumor উৎপত্তি বলে একে craniopharyngioma ও বলে।
Rathke’s pouch থেকে মূলত যে জিনিসটা তৈরি হয় সেটা Pituitary gland এর সামনের অংশ যা adenohypophysis নামে পরিচিত। Rathke’s pouch cell থেকে adenohypophysis তৈরি হওয়ার পরও কিছু cell রয়ে যেতে পারে। এই অবশিষ্ট cell গুলোই পরবর্তীতে সংখ্যা বৃদ্ধি করে এই tumor তৈরি করতে পারে।
Pituitary gland যে জায়গায় থাকে সেটা বেশ সুরক্ষিত ও স্পেশাল একটা জায়গা, যার নাম sella turcica, যেটা sphenoid bone ও থাকা একটা ছোট্ট গর্ত। লম্বা বোঁটার সাথে যেমন ফল ঝুলে থাকে, এটা ঠিক তেমনই উপরের hypothalamus থেকে pituitary stalk দিয়ে নিচের দিকে sella turcica তে pituitary gland ঝুলে থাকে। craniopharyngioma এই sell turcica এর উপরের দিকে বড় হয়, তাই এই tumor কে suprasellar tumor ও বলে।
এই tumor উপরের দিকে বড় হয়, যেখানে থাকে optic chiasma. আশেপাশে থাকে meninges. tumor বড় হয়, meninges কে চাপ দেয়, মাথা ব্যথা হয়। optic chiasma কে চাপ দেয়, চোখের দৃষ্টি কমে যায়। উপরের hypothalamus থেকে ঝুলে থাকা pituitary stalk ও নিচে pituitary gland কে চাপ দেয়, গন্ডগোল হয় pituitary gland function নে।
চিকিৎসা?
Radiotherapy দিয়ে gland ছোট করে mass effect কমানো যায়।
সার্জারি। এটা উপর থেকে Scalp কেঁটে করা যায়, Craniotomy, যেটা ওর করা হয়েছে। আর একটা সার্জারি হল – Trans sphenoidal sinus surgery, নাক হয়ে – sphenoid air sinus হয়ে তারপর অপারেশন করা।
অপারেশনের জটিলতাও আছে। injury হতে পারে আশেপাশের অনেক structure এ, এরা সেই সব structure যেগুলোতে tumor নিজেই চাপ দিচ্ছে। অপারেশন শেষে কিছু tumor cell রয়ে গেলে আবার সেখান থেকে tumor recurrence হতে পারে! ওর কিন্তু সেটাই আবার হচ্ছে, এত বছর পর নতুন MRI করে আবার যার প্রমাণ পাওয়া গেল!
যাই হোক, ও কিন্তু মাথা ব্যথা বা চোখের সমস্যা নিয়ে এখন হাসপাতালে আসেনি। এসেছে পেট ব্যথা নিয়ে। ওর এখন খাওয়ার রুচি অনেক, খাচ্ছে, মোটাও হচ্ছে অনেক, কিন্তু সেই তুলনায় বড় হচ্ছে না, secondary sexual characteristic ও তেমন একটা develop করে নি।
এসব সমস্যা নতুন করে আবার বড় হওয়া tumor এর জন্যও হতে পারে, বা পূর্বের অপারেশন জনিত অনিবার্য পরিণতি হিসেবেও হতে পারে, ওর এসব সমস্যা দেখে শুনে মনে হয় ওর Panhypopituitarism ডেভেলপ করেছে। যার কারণ হতে পারে সরাসরি pituitary gland কে চাপ দেয়া, বা indirectly – যেটা হয় hypothalamus কে চাপ দেয়ার ফলে, যার জন্যই হয় satiety centre এ গন্ডগোল হয়ে ও বেশি বেশি খাচ্ছে।
ওকে কিছু hormone replacement দেয়া হল। এ ছাড়া এই অবস্থায় মেডিসিনের আর কিছু করারও নেই। নতুন বিপদ বড় হচ্ছে, যার বাকিটা তখন সার্জনদের হাতে।
এরপরে আর খোঁজ নেয়া হয়নি। ছবি দুটো তখন তোলা ছিল। ছেলেটা ভাল থাকুক, ওর অনর্গল বলা কথাগুলো আজ আবার খুব মনে পড়লো…
(ছবি দুটো অনুমতি নিয়ে তোলা)
Edited By : Nahid Hassan.
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.