Writer : Dr. Tania Hafiz
আমি যেহেতু গাইনি রোগি বেশি দেখি সুতরাং আজ এই গাইনি রোগী এবং তাদের পরিবারের মানুষের ভ্রানত ধারণা সম্পর্কে কিছু কথা Share করি। জানিনা আপনারা এইসব ভ্রানত ধারনার সম্মুখীন হন কিনা…..
গর্ভবতীদের ভ্রানতো ধারনা—
১। ভিটামিন, আয়রন, ক্যালশিয়াম খাওয়া যাবেনা, এতে বাচচা বড় হয়ে যাবে তখন নরমাল ডেলিভারী করা যাবেনা।
২। Ultrasonogram করা হয় শুধুমাত্র ছেলেমেয়ে জানার জন্য। যেখানে অন্যান্য টেস্টের গুরুত্ব নাই।
৩। গর্ভকালীন সময় সালোয়ার এর রিবন টাইট করে বেধে রাখা যেন বাচচা উপরে উঠতে না পারে।
উদাহরনঃ একবার একজন বললেন টাইট করে না বাধলে বাচচা বুকের খাচার মধ্যে ঢুকে যাবে। আরেকবার একজন বললেন বাচচা একবার উপরে উঠলে আর নিচে নামবেনা তখন নরমাল ডেলিভারী করা যাবেনা ম্যাম তাই টাইট করে বেধে রেখেছি।
৪। গর্ভকালীন সময় পা ফুলে যাওয়াকে তারা তেমন গুরুত্ব দেয়না, তারা বলেন “এইসময় তো পা ফুলতেই পারে তার জন্য আবার ডাঃ দেখাতে হবে কেন, টেস্ট কেন?” কিন্তু আমরা তো জানি এই পা ফুলাও অনেক সময় বিপদজনক হতে পারে চেকআপ না করালে।
৫। প্রায়ই রোগী ও তার পরিবার বলেন নরমাল ডেলিভারী হওয়ার ওষুধ দিন। আমি বলি এমনতো কোনো ওষুধ নাই। তারা বলেন আছেতো হোমিও/কবিরাজি ডাক্তাররাতো দেয়।
৬। সন্ধ্যার পর বাহিরে বের হওয়া যাবেনা তাদের।
এরজন্য আমার এক রোগী কষ্টে ভুগেছিলো। দুপুর থেকে বাচচার নড়াচড়া বুঝেনা, বিকালেও বুঝে নাই সন্ধ্যায় বের হলে ক্ষতি হবে তাই আসলোনা সারারাত এমন থাকলো সকালে আমার চেম্বারের লোকদের বললো ম্যামকে কল করুন, তখন হাসপাতালে ভর্তি হতে বললাম, Ultra তে low heart beat সাথে Oligo।
৭। Breastfeeding মা এর ঠান্ডা থেকে বাচচারও ঠান্ডা লাগে।
৮। সিজার বা ইপিসিওটোমির রোগীদের নোটে যদি ভিটামিন সি সম্মৃদ্ধ খাবার লিখি তারা বলে এগুলি খেলে সেলাই পাকবে, এমনকি দুধ ডিমও খেতে দেয় না একই কথা বলে।
৯। Oligohydramnios ultra তে পেলে রোগীকে বুঝাতে গেলে তার শাশুড়ি বলেন “রোগীতো পানি খায় প্রচুর তাহলে কেন এমন হলো, আবার কেউ বলে আগে থেকে বলেছি পানি খাও বেশি বেশি এখন দেখছো পানি কম।”
এবার আসা যাক গাইনী রোগীদের ভ্রানতো ধারনা—-
১। গাইনি রোগীরা সাদাস্রাব এরজন্য দূর্বল থাকে, কিন্তুু যখন ডাক্তার এর কাছে আসে তখন ঠান্ডা, কাশি থেকে শুরু করে সব সমস্যা বলবে কিন্তু সাদাস্রাব বলবেনা। জিগ্যেস করলে বলবে প্রচুর হয়,চুলকায়। বলে লজ্জায় ডাক্তার দেখাইনা।
২। বাচচা যাদের হয়না তাদেরকে যখন বলা হয় যে স্বামীকেও নিয়ে আসবেন কথা বলতে হবে তখন বলে ওর কোনো সমস্যা নাই, আসা লাগবে কেন? আবার যদি সামী সাথে আসে তাকে টেস্ট করতে বললে বলে আমার কোনো সমস্যা নাই আমার বউরে চিকিৎসা আগে করুন। মনে হয় সব সমস্যা যেন বউয়ের।
৩। মাসিকের সময় সেনেটারী ন্যাপকিন ব্যবহার করতে নারাজ। তাদের ভাষ্য “ন্যাপকিন বাহিরে ফেলে দিতে হয় ব্যাবহারের পর, তখন নাকি ওগুলিতে খারাপ বাতাস লাগে ইনফেকশন হয়।” কিন্তু তারা একবারও ভাবেনা যে কাপড় বারবার ধুচ্ছে সাথে আবার বাহিরে শুকাচছে এতে ইনফেকশন হয় না?
৪। পিল এর ক্ষেএে তারা অনেক অনিয়ম করেন। যেমনঃ কেউ কেউ husband শহর থেকে গ্রামে আসলে শুধু ওই কয়দিনই পিল খাবে, আবার কেউ কেউ আছে পিল মিস হচ্ছে আবারও নিয়ম করে না খেয়ে ওভাবেই চলছে কোনো প্রোটেকশন নাই। রেজাল্ট consive করলে নির্বিচারে abortion করাচ্ছে।
৫। গার্মেন্টস কর্মীরা মোটা হওয়ার জন্য ফার্মেসী থেকে ওষুধ নিয়ে খায় একঃ Steroid দুইঃ আমলকি সিরাপ /সিনকারা। Steroid তারা ফুলে যাচ্ছে। আর ঐ সিরাপ যখন বন্ধ করে তখন খাওয়ার রুচিও শেষ। আসে আমাদের কাছে ভিটামিন দিন মুখের রুচি বাড়াতে, মোটা হতে।
৬। Genital prolapse এই সমস্যা অনেক রোগীর থাকে বিশেষ করে বয়স্কদের। তারা এটাকে লুকাতে চায় কখনো লজ্জায় আবার কখনো ভয়ে।
এক ৪৮ বছরের রোগী তার মেয়ে তাকে জোর করে এনেছে দেখানো জন্য মাসিকের রাস্তা দিয়ে কি যেন বের হয়ে আসে। ইতিহাসে শুনলাম মাসিকের স্থান কেউ যেন না দেখে (ডাঃ) আর অন্যরা জানলে লজজা পাব তাই ডাঃ দেখাই না। পরে দেখলাম 3rd degree uterine prolapse with ulceration. Bad smelling. অপারেশন advice করলাম। ৬মাস আগের কথা। সেদিন আসলো সুস্থ। আর আগে জড়সড় হয়ে বসে থাকতো।
এমন আরো অনেক ভ্রানত ধারণা আছে তাদের মাঝে। আমাদের উচিৎ চিকিৎসাসেবা দেয়ার পাশাপাশি এই ধরনের চিন্তা কে যুক্তি দিয়ে ভুল প্রমানিত করা। নয়তো এই ভুল ধারনার জন্য সে নিজের, বাচচার, পরিবারের ক্ষতি করবে। সাথে রোগীর পরিবারেরও কাউন্সিলিং প্রয়োজন। আর তার জন্য রোগীকে একটু বেশি সময় নিয়ে দেখতে হবে।
পরিশেষে সবার সাফল্যময় প্রাকটিস এরজন্য শুভকামনা রইলো।
Edited by : Mohammad Nahid Hassan.
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.